ভোটের মুখে মুর্শিদাবাদে সংখ্যালঘুদের উন্নয়ন অনুন্নয়ন নিয়ে দড়ি টানাটানি রাজনীতির কারবারিদের

বিদ্যুৎ মৈত্র, বহরমপুরঃ লোকসভা নির্বাচনের দেরি বলতে মেরেকেটে দু’মাস। প্রশাসনের অন্দরের তৎপরতা জানাচ্ছে এপ্রিলেই হয়ে যাবে ভারতের ১৮ তম লোকসভা নির্বাচন। সেই নির্বাচনের আগে বৃহস্পতিবার দিনভর সংখ্যালঘুদের উন্নয়নের ফাঁক ফোকর নিয়ে লম্বা বৈঠক করলেন মুর্শিদাবাদ জেলা প্রশাসনের কর্তারা। দুটি পর্বে সেই বৈঠক হয়। প্রথম পর্বে ছিল সেন্সিটাইজেশন শিবির। দ্বিতীয় পর্বে ছিল রিভিউ মিটিং।

সম্প্রতি সাচার কমিটির আঠেরো বছর পুর্তি হয়েছে। কমিটির রিপোর্টের প্রস্তাব অনুযায়ী সংখ্যালঘু বিশেষ করে মুসলমান সমাজের দশ শতাংশ উন্নতি যে হয়নি সে কথা ফের আলোচনায় উঠে আসছে। এই অবস্থায় সংখ্যালঘুদের নিয়ে একদিকে সরকারি বৈঠক ও অন্যদিকে রাজ্যের বিরোধী দলের সাংগঠনিক বৈঠকে জোরালো হল রাজনৈতিক চর্চা।

দুটি সরকারি বৈঠকেই উঠেছে অধরা উন্নয়নের ইতিকথা। আলোচনা হয়েছে সংখ্যালঘুদের অন্ন, বস্ত্র, বাসস্থান আর স্বাস্থ্য নিয়ে। বৈঠকে উপস্থিত আমলাদের আমন্ত্রীত অতিথিরা জানিয়েছেন জেলায় সংখ্যালঘুদের জন্য স্কুল আছে, কিন্তু শিক্ষক নেই, কোথাও শিক্ষক আছে, পড়ুয়া আছে অথচ হস্টেল নেই। সবার মাথার উপরে ছাদ নেই। মুর্শিদাবাদ বিশ্ববিদ্যালয়ে  আরবি পড়ানো হয়, আইন পড়ানো হয় অথচ পর্যাপ্ত শিক্ষক নেই। বাইরে থেকে যাঁরা পড়তে আসছেন তাঁদের থাকার জায়গা নেই। সেসব তৈরি করতে হবে বলে বৈঠকে সরব হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার মিজানুর রহমান।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন সমাজ চিন্তক হাসিবুর রহমান। তিনি বলেন, “বহরমপুর শহরে অন্তত পক্ষে দুটো হস্টেল প্রয়োজন। মুর্শিদাবাদ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ওপর থেকে চাপ কমাতে পুরনো হাসপাতাল চালুর দাবি তুলেছি আমরা। একইভাবে ডোমকলের মতো মহকুমায় আরও একটি মেডিক্যাল কলেজের প্রয়োজন সে কথাও বলা হয়েছে বৈঠকে।” বৈঠকে কথা উঠেছে বাল্য বিবাহ সহ মহিলাদের একাধিক সমস্যা নিয়েও।  শতাধিক নেই-তেই লম্বা হয়েছে তালিকা। প্রস্তুাব উঠেছে একটি কমিটি তৈরির। যে কমিটি জেলার সমস্যা তুলে ধরবে ওপর মহলের কাছে।

আবার রাজ্যের সরকারি বৈঠকের দিনেই মুর্শিদাবাদের তিনটি লোকসভার দলীয় পদাধিকারিদের নিয়ে বৈঠক করেছে বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চা। বহরমপুর গ্রান্ট হলের এদিনের বৈঠকে হাজির ছিলেন বিজেপির সংখ্যালঘু মোর্চার সর্বভারতীয় সভাপতি জামাল সিদ্দিকি।

যা শুনে জেলা কংগ্রেস মুখপাত্র জয়ন্ত দাস বলেন, ” এ যেন কুমিরের কান্না। লোকসভা নির্বাচনের আগে এনআরসি সিএএর ঢোল বাজাচ্ছে একটা দল আর একটা দল সংখ্যালঘুদের মন পেতে রঙবেরঙের পসরা সাজিয়ে মন ভোলানোর চেষ্টা করছে তাঁদের। সংখ্যালঘুদের প্রকৃত উন্নয়নই যদি রাজ্য সরকার চায় তাহলে শিক্ষক নিয়োগ আটকে রেখেছে কেন? কেন্দ্র সংখ্যালঘুদের ভয় দেখানোর জন্য সিএএ, এনআরসি নিয়ে অগ্নিবাণ নিক্ষেপ করে কেন? আসলে এরা সকলেই একই মুদ্রার এপিঠ আর ওপিঠ।” সিপিএমের জেলা সম্পাদক জামির মোল্লা বলেন, ” মানুষ যে তাদের দিক থেকে মুখ ফিরিয়েছে তা দুটি শাসক দলই পঞ্চায়েত নির্বাচনে টের পেয়েছে। স্বাভাবিকভাবেই তাই ভোটের আগে ফের সংখ্যালঘুদের মন পেতে মাঠে নেমেছে।”

বিজেপির বহরমপুর সাংগঠনিক জেলার সভাপতি শাখারভ সরকার রাজ্য সরকারের সমালোচনা করে বলেন, “রাজ্য সরকার কী করেছেন না করেছেন তা সংখ্যাালঘু ভাইবোনরা ভালই বুঝেছেন, বুঝিয়েও দিয়েছেন। আজ বিজেপির সংখ্যলঘু মোর্চার বৈঠক ছিল পূর্ব ঘোষিত। সেই আতঙ্কে ভুগছে বলেই কী করতে পেরেছে কী করতে পারেন নি বলে তড়িঘড়ি আলোচনায় বসেছে। মর্শিদাবাদের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে স্রেফ ভোট ব্যঙ্ক হিসেবে ব্যবহার করেছে আর সকেট মাস্কেট তৈরি করতে ব্যবহার করেছে রাজ্য সরকার এ কথা এখন লোকের মুখে মুখে ঘুরছে।”

তৃণমূলের বহরমপুর-মুর্শিদাবাদ সাংগঠনিক জেলার সংখ্যালঘু সেলের সভাপতি আবুল কাওসার বলেন, ” প্রত্যেক বছর মাইনোরিটি কমিশন আসে জেলায় কতটা কাজ হয়েছে? কতটা বাকি আছে তার একটা তথ্য নিতে। কংগ্রেস, সিপিএম বিজেপি এরাও সেই সত্যিটা জানে। তবুও বলে। আর বিজেপি যে সংখ্যালঘু বিরোধী মুখ তা দেশের নাগরিকদের কাছে অজানা নয়। ফলে রাজনীতির জন্য রাজনৈতিক কথাবার্তা বলছে ওরা। মানুষ জানে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সংখ্যালঘুদের পাশে ছিল, আছে, থাকবেও।”